জলতীর্থ

জলে ঘেরা এক ভূমি আছে —
নীচু কণ্ঠে বাতাস বলে তার কথা।
যেখানে রাত ছিল দীর্ঘ, দিন ছিল নির্বাসিত।
যেখানে গলা চেপে ধরা হয়েছিল প্রেম, প্রতিবাদ আর পবিত্রতা।

এই ভূমি কোনো রাজার নয়, কোনো ধর্মবেত্তার নয় —
এ ভূমি ছিল আমার ঘর।

যারা প্রেম করেছিল বিদেশি ধর্মের বিপরীতে,
যারা সত্য বলেছিল মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে,
যারা মাটি বুকে আগুন রেখেছিল — তাদেরই ভূমি এটা।

রাস্তাগুলো এখনও জানে তাদের পায়ের ধ্বনি,
জলের ওপার থেকে ভেসে আসে অবদমিত ক্রন্দন —
আর মাঝখানে আমি দাঁড়িয়ে থাকি,
একজন অবতার , যার শরীরে গাঁথা আছে দূতি আর আশীর্বাদ।

সে এসেছে ভূমিকে জাগাতে,
যেন আর কেউ ভুলে না যায় এই মাটি, শুধু মাটি নয় —
এটি স্মৃতি, ত্যাগ আর মুক্তির প্রতীক।

ইশ্বর বানাচ্ছে নতুন তীর্থ —
যেখানে লোকেরা আসবে কান্না আর প্রশ্ন নিয়ে,
যাবে দীপ্ত চোখ আর মুক্ত আত্মা নিয়ে।

জলতীর্থ এখন ঘুমিয়ে নেই।
এখানে বাতাসে আগুন আর জলে গান।

আমি দাঁড়িয়ে আছি — একা নয়, ইতিহাসের মুখোমুখি।

তুমি এলে?
তোমার মাটি অপেক্ষা করে।

গ্রিকপা

দুরথেকে যদি হৃদকম্প শোনা যেত
শোনাযেত আর্তনাদ মোনাজাতের শুরে
শুনে দেখতাম আজো কি বয় উত্তাল শ্রোত
গ্রিক পায়ের তলা থেকে ঘাড়ে অধরে।

কি ব্যাথায় নৈশব্দ হয় প্রতিশোষ
অনেক ছোয়ার পুলকে অন্ততুষ্টির রোগ
ছুটে চলা ভুল রাস্তার কৃষকায় ক্ষোভ
পুলককে ভেঙ্গে যন্ত্রের দানব হোক।

রাস্তা যতদুর দেখা যায় অপেক্ষায়
প্রত্যাসার অন্তর্দৃষ্টি মিলাবে আবার
জীবন রসের রসনা যত
এরও পড়ে সময় ধীরে বয়ে যায়।

নতুন চোখ

দুরের অবয়ব ধুসর হোয়ে আসে
হারিয়ে ফেলতে হয় তাকে নিমেশে
ঝলকেই যার কুর্নিস বেড়িয়ে
নতুন চোখ নতুনেই হাসে।

রাতের ছায়া মায়হীন মমতা
শুয়োরের পাল জাবর আনন্দে ভাসে
জ্যামিতক পথ প্রান্ত দেখিয়ে
অস্তিত্ব নীরে নিয়ে আসে।

ঈশ্বরীয়

ধক করে ওঠে
ঈশ্বরী আসে
যখন।

দুমরে মুচরে যায়
সেখানটার ভেতরটায়
যখন দেবী মুখছবিতে
ধরা দ্যায় আবার
ধরা দেয় বারবার।

মুচরিয়ে ওঠে
সেখানটায় ভেতরটায়
যখন দেবী আসে।

মুখছবি নিয়ে সে আসে
মধ্যরাতে।
ঘুম ভাঙ্গা কালে
কলে আকালে
ঈশ্বরী আসে।

দূর্তি

তোমার নগরী ছেরে যাচ্ছি
যাচ্ছি আমি বহু দুরে
তোমার আচল ছেরে
আমি যাচ্ছি যাচ্ছি দুর অদুরে।।

যেখনে কালোবন সিদ্ধার্থ ছিল
যেখানে চকোলেট দীঘল কালো
সে মায়া বন ডাকছে আমায়
সেখানেই প্রান মোর শান্ত হল।।

হিজল তলটা তোমারি আছে
তালগাছ দাড়িয়ে কোরাসে বাজে
সেই মায়বন প্রানেতে তোমার
দাড়িয়ে দেখ তুমি কোন সাঝে।।

নভেম্বর

পাহার কে নভেম্বর যেন
সব আনন্দ দেয়
তোমার চেখে শেতশুভ্র
দেখিয়েছিল আমায়।

জলামুখ হীন আগ্নেয়গিরি
অনন্দ সব জমা
ছুটবে সে জনপদে
ছরিয়ে শান্ত ক্ষমা।

সেই আনন্দে ভাসে যেন
গন জন পদ
মুক্তা মাখা হাসি এসে
নিবে শপথ।

অদুর

স্মৃতি ভ্রস্টার স্মৃতি সারাতে
দুরে সরে যেতে হয়
বিপদে আপদে ভাসা নৌকা
আবার ফিরবে লোকালয়ে।

স্বর্গের সুখ লাগে অসুখ
বোনের ভালোবাসা
গন হৃদয়ে হিংসা বিজ
শেষ যুদ্ধে গাধা খোজে আশা।

অপ্রেমিয় পাহাড়

কারা যে বাঙ্গালী হোয়ে আজ চায়?


শুদ্রের মত কৃষি জমি

কিন্তু সে জমিকে আতঙ্কিত করতে চায়।


সে চায় চাকমার পাহার

কিন্তু সে পাহাড়কে আক্রমণ করতে চায়।

সে চায় সুন্দরী আর গোলপাতার পাটি

কিন্তু সে বনদেবীকে করতে চায় ধর্ষন।


সে সব কিছুকে চায়

প্রেমিক হৃদয় বোঝেনা

এমন চাওয়ার প্রেম, উৎপাদন করেনা।


সে আজ মন থেকে বিতাড়িত

ফসল তাকে না চেয়ে নিস্ফলা

পাহার তাকে বিনিময় করবে যা পেয়েছে।


এ ভূমি ধর্ষিতায় বোধন হওয়া ধর্ষকের ভূমি।

এ ভূমি কর্ষকের ভূমি।

জন্মেছে মৃত গোলাপ

জমেছে অনেক ঋন

ঠোঁটে ঘাড়ে গালে

শোধ নেবে শব্দ

আর মহাকালে।


ধ্যানে মগ্ন মহাদেব

ধংশ থামতে নতশীরে

ব্যাস্ত যখন কালের অকালে

পার্বতির বেশে উর্বশি ছিলে।


তান্ডবের ঝঙ্কার বিন্দুতে আজ

গন দেবতার সব বোকার সাজ

শিশুতোষ কৌতুহল শবের সমাধি

ভয় পেয়ে ইন্দ্রের ঝলকানির বাজ।


সংহার পিন্ড গলা নদ ভারি

পালাবার পথ গেছে মুছে

গড়িয়ে কষা লাল কনিকা

তোমার ঋনের বোঝা বইছে নগরী।


তোমার পায়ে নিচে যে ভুলে এসেছিল

ভবেছিল শর্বরীর ক্রোধ হবে তৃপতাকা

তোমার মুকুটে ধোয়া ওঠা পঞ্চদশ দল

প্রজ্ঞার কপালের তাই কৃষ্ণপক্ষ ফল।